জমি কিনতে কি কি কাগজ লাগে ২০২৪?
জমি ক্রয় করার সময় ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে কিছু প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দিতে হয়। এসকল কাগজপত্র সঠিকভাবে দিতে না পারলে রেজিস্ট্রেশন করা যায় না কিংবা অন্যদিন যেতে বলা হয়। এর ফলে ক্রেতা ও বিক্রেতা নানান দ্বিধা-দ্বন্দ্বের সম্মুখীন হতে পারে।
অন্যদিকে, জমি কেনার আগে কিছু কাগজপত্র যাচাই-বাছাই করে দেখে নিতে হয়। তা না হলে ক্রেতা পরবর্তীতে জালিয়াতির সম্মুখীন হতে পারে। তাই এই আর্টিকেলে আপনাদের সুবিধার জন্য জমি রেজিস্ট্রি করতে বা জমি কিনতে কি কি কাগজ লাগে এবং জমি কিনতে কি কি দেখা লাগে সে সম্পর্কে গাইডলাইন লিখে দেওয়া হলো।
জমি কিনতে কি কি কাগজ লাগে?
জমি কেনা বা রেজিস্ট্রী করার জন্য ভোটার আইডি কার্ডের ফটোকপি/ এনআইডি সার্ভার কপি ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি থাকলেই দলিল লেখকদের মাধ্যমে জমি ক্রয় করতে পারবেন। আপনার কাছে শুধুমাত্র এই দুইটি ডকুমেন্ট থাকলেই জমি রেজিস্ট্রি করে নিতে পারবেন।
তবে যার কাছ থেকে জমি ক্রয় করবেন, তার আরো বাড়তে কিছু ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে। তাছাড়া প্রতিটি ক্রেতারই উচিত হবে সতর্কতার সাথে জমির যাবতীয় কাগজপত্র ভালোভাবে যাচাই বাছাই করে নেওয়া। তাই বলা যায় জমি ক্রয় করতে আরো কিছু জমি সংক্রান্ত ডকুমেন্টস প্রয়োজন হবে।
যেমন: যেই জমি ক্রয় করতে চাচ্ছেন সেই জমির খতিয়ানের কপি, জমির কর পরিশোধের রিসিট, জমির দলিলের ফটোকপি ইত্যাদি। যাইহোক, এ সম্পর্কে আমরা নিচে আরও বিস্তারিত জানতে পারবো।
আরও পড়ুনঃ
- ই খতিয়ান অনুসন্ধান করুন | e Khatian Check.
- অনলাইনে বি আর এস খতিয়ান যাচাই।
- অনলাইনে আর এস খতিয়ান অনুসন্ধান করার নিয়ম।
- বি এস খতিয়ান যাচাই করুন।
জমি কিনতে কি কি লাগে ২০২৪?
বর্তমানে কোন জমি ক্রয় করার জন্য ক্রেতার ভোটার আইডি কার্ডের সার্ভার কপি ও এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি, এবং বিক্রেতার এনআইডি সার্ভার কপি, পাসপোর্ট সাইজের ছবি, জমির খতিয়ানের কপি, কর পরিশোধের রিসিট, দলিলের ফটোকপি ও মূল দলিল ইত্যাদি ডকুমেন্টস এর প্রয়োজন হবে।
এছাড়াও সাধারণত কোন জমি ক্রয় বিক্রয় করার সময় কয়েকজন সাক্ষীর প্রয়োজন হয়। তাই জমি কিনতে সাক্ষী এবং দলিল লেখকেরও প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। আপনাদের কাছে যদি এই সকল কিছুই থাকে তাহলে আপনার এলাকায় বা যেকোনো এলাকায় ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসে গিয়ে জমি রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন।
সাধারণত এসকল কাগজপত্রের কোনোটি না থাকলে ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে দলিল লেখা এবং হস্তান্তর করা হয় না। তাই জমি কেনার জন্য অবশ্যই আপনাকে এ সকল কাগজপত্র গুলো সাথে নিয়ে যেতে হবে।
আরও পড়ুনঃ জমির ই নামজারি করতে কি কি লাগে ২০২৪
জমি বিক্রয় করতে কি কি কাগজ লাগে?
সাধারণত জমি বিক্রয় করতে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের জাতীয় পরিচয়পত্রের সার্ভার কপি, পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি, সংশ্লিষ্ট জমির দলিল, খতিয়ান, জমির মূল দলিল/ সার্টিফাইড নকল কপি ও জমি সংক্রান্ত অন্যান্য কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়।
বর্তমানে কোন জমি বিক্রয় করতে গেলে প্রথমে সেই জমি বিক্রেতার নিজের নামে নামজারি করে নেওয়া অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই জমি বিক্রয় করতে গেলে বিক্রেতাকে সর্বপ্রথম অনলাইনে জমির নামজারি করে নিতে হতে পারে।
জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি কাগজ লাগে ২০২৪
২০২৪ সাল প্রায় শেষ পর্যায়ে চলে এসেছে। তাই ২০২৪ সালে বা ২০২৫ সালে জমি রেজিস্ট্রি করতে কি কি কাগজ লাগবে সে সম্পর্কে নিচে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য লিখে দেওয়া হলো:
- এনআইডি সার্ভার কপি: সাধারণত আমাদের এলাকার ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসগুলোতে জমি রেজিস্ট্রি করার সময় nid card এর কপি চেয়ে থাকে। এক্ষেত্রে লেমিনেশন করা প্রিন্টেড এন আইডি কার্ডের কপির পরিবর্তে সার্ভার কপি জমা নেওয়া হয়। অর্থাৎ জমি রেজিস্ট্রি করতে ক্রেতা ও বিক্রেতার NID Card এর সার্ভার কপি সংগ্রহ করে জমা দিতে হবে।
(ক্রেতা বা বিক্রেতার এনআইডি কার্ড না থাকলে, পাসপোর্ট বা ডিজিটাল জন্ম নিবন্ধন সনদের কপি জমা দিতে হবে।)
- রঙিন ছবি: ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয়ের এক কপি পাসপোর্ট সাইজের রঙিন ছবি জমা দিতে হবে। সাধারণত এগুলো দলিলের নির্দিষ্ট পৃষ্ঠায় পিনআপ করে লাগিয়ে দেওয়া হয়।
- কর পরিশোধের রিসিট: যেই জমি কেনা বেচা করতে চাচ্ছেন সেই জমির ভূমি উন্নয়ন কর চলতি বছরে পরিশোধ করে, সেই কর পরিশোধের রশিদ নিয়ে যেতে হবে। ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ ব্যতীত সংশ্লিষ্ট জমি কেনাবেচা করা যাবে না।
- জমির দলিল: জমি কেনাবেচা করার জন্য অবশ্যই জমির বর্তমান দলিল সাথে নিয়ে যেতে হবে। তবে যদি বর্তমানের মূল দলিল নিয়ে যেতে না পারেন তাহলে রেজিস্ট্রি করার জন্য দলিলের সার্টিফাইড নকল কপি জমা দিতে হবে।
- খতিয়ান: জমির মালিকানা প্রমাণের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টগুলোর একটি হলো সংশ্লিষ্ট জমির খতিয়ান। তাই যে জমি কেনাবেচা করতে চাচ্ছেন সেই জমির খতিয়ানের কপি রেজিস্ট্রি অফিসে নিয়ে যেতে হবে। এক্ষেত্রে যদি সংশ্লিষ্ট জমি নামজারী করা থাকে, তাহলে বেশি ভালো হয়। সেক্ষেত্রে নামজারি খতিয়ানের কপি জমা দিতে পারেন।
এছাড়াও সংশ্লিষ্ট ভূমি রেজিস্ট্রি অফিসার দলিল লেখক আপনার কাছে আরো কিছু ডকুমেন্টস চাইতে পারে। এগুলো যথাযথভাবে সরবরাহ করলেই জমি রেজিস্ট্রি করতে পারবেন।
আরও পড়ুনঃ বর্তমানে নামজারি করতে কত টাকা লাগে জেনে নিন।
জমি কিনতে কি কি দেখা লাগে?
সাধারণত জমি কেনার আগে ক্রেতাকে অনেক সতর্কতার সাথে পদক্ষেপ ফেলতে হয়। কারণ সচেতন নাহলে যেকোন ভাবে বিক্রেতা বা কোন দালালের দ্বারা জালিয়াতি/ প্রতারণার শিকার হতে পারে। তাই জমি কেনার আগে কিছু বিষয় ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে দেখে নেওয়া উচিত। এক্ষেত্রে আপনি যা যা করতে পারেন, সেগুলো হলো:
(১) জমির মালিকানা নিশ্চিত করা
বর্তমানে অনলাইনে খুব সহজেই জমির মালিকানার তথ্য যাচাই-বাছাই করা যায়। অনেক সময় কোন এক ভাইয়ের নামে রেজিস্ট্রেশন করার জন্য অন্য ভাই বিক্রি করতে চায় (বাবার সম্পত্তি বলে)। আমার অবস্থায় কেউ যদি সেই জমি ক্রয় করে, তাহলে পরবর্তীতে হকদার ভাই সেই জমি ফিরে পেতে আইনি ব্যবস্থা নিতে পারবে। তাই এসকল বিষয়ে নিশ্চিত থাকতে অনলাইনে জমির মালিকানা যাচাই করে নিবেন।
(২) নামজারি ও খতিয়ান দেখে নেওয়া
বাংলাদেশের অনেক অঞ্চলের খতিয়ান ও মৌজা ম্যাপ এখনো পর্যন্ত অনলাইনে সার্ভারে আপলোড করা হয়নি। তাই অনেক জমির নামজারি ও খতিয়ানের আপডেট তথ্য দেখায় না। বরং দাদার আমলের খতিয়ানের তথ্যই দেখায়। সেক্ষেত্রে ভূমি অফিসে গিয়ে উক্ত জমির বর্তমান নামজারি ও খতিয়ানের তথ্য যাচাই করে, জমির সর্বশেষ মালিক কে তা জেনে নিতে হবে।
(৩) ভূমি উন্নয়ন কর
যে জমি কিনতে চাচ্ছেন সেই জমির বর্তমান বছরের ভূমি উন্নয়ন কর পরিশোধ করা হয়েছে কিনা তা জেনে নিবেন। অন্যথায়, ভূমি অফিসে গিয়ে রেজিস্ট্রি না করেই ফিরে আসতে হতে পারে।
আরও পড়ুনঃ অনলাইনে জমির খাজনা চেক করার নিয়ম।
(৪) জমির ভোগ দখলকারী
যিনি আপনার কাছে জমি বিক্রি করতে চাচ্ছেন, তিনি ব্যতীত অন্য কেউ সেই জমি ভোগদখল করছে কি-না, সে সম্পর্কে ভালোভাবে জেনে নিবেন।
(৫) জমি বায়না/ বন্ধক আছে কিনা
সংশ্লিষ্ট জমি অন্য কারো কাছে বন্ধক দেওয়া আছে কি-না, কিংবা উক্ত জমির জন্য আপনার আগেই কেউ বায়না দিয়েছে কিনা সে বিষয়ে সঠিক তথ্য জেনে নিবেন।
এ সকল বিষয় দেখেশুনে এবং ভালো কয়েকজন সাক্ষী রেখে জমি কেনা-বেচা করতে হবে। অন্যথায়, নানান জালিয়াতির শিকার হতে পারেন।
শেষকথা
জমি কিনতে ও বিক্রি করতে কি কি কাগজ লাগে আজকের পোস্টে উল্লেখ করেছি। তাই যারা, নতুন জমি ক্রয়-বিক্রয় করবেন উপরোক্ত কাগজপত্র আগে থেকে সংগ্রহ করে রাখবেন। তাহলে জমি রেজিস্ট্রি করার সময় ঝামেলা হবে না।
FAQ’s
ভোটার আইডি কার্ড না হলে আপনার ডিজিটাল/ অনলাইন করার জন্ম নিবন্ধন সনদ কিংবা পাসপোর্ট থাকলে পাসপোর্ট এর ফটোকপি দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে পারবেন।
একটি জমি রেজিস্ট্রি করতে বিভিন্ন বিষয়ের উপর ভিত্তি করে ১-২ দিন আবার কিছু ক্ষেত্রে এক সপ্তাহ পর্যন্ত সময় লাগতে পারে।
কোন জমি রেজিস্ট্রি করার পর সাথে সাথেই জমির মূল দলিল দেওয়া হয় না। মূল দলিল পেতে কমপক্ষে ৪ মাস থেকে শুরু করে ৩-৪ বছর পর্যন্ত সময় লাগতে পারে। এক্ষেত্রে ৪-৫ মাস পেরিয়ে গেলে আপনার দলিল লেখকের সাথে যোগাযোগ করে আপডেট জেনে নিবেন।